আনঅফিসিয়াল ফোন অফিসিয়াল করার উপায়
আনঅফিসিয়াল মোবাইল অফিসিয়াল করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানার আগে আমাদের সর্বপ্রথম জানতে হবে অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল ফোনের মধ্যে পার্থক্যসমুহ। বিদেশ থেকে আমাদের দেশে যেই মোবাইল গুলো সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে আমাদের দেশে আসে অর্থাৎ যে মোবাইল ফোন গুলো সরকার কর্তৃক অনুমদিত সেই মোবাইলক অফিসিয়াল।
বিদেশ থেকে আমাদের দেশে যেই মোবাইল গুলো সরকারকে ট্যাক্স না দিয়ে আমাদের দেশে আসে অর্থাৎ যে মোবাইল ফোন গুলো সরকার কর্তৃক অনুমদিত না সেই মোবাইলক আনঅফিসিয়াল। আমরা যারা এখন আনঅফিসিয়াল বা অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন তাদেরকে মোবাইল নিবন্ধন করে নিতে হবে।
পেজ সূচিপত্রঃ আনঅফিসিয়াল ফোন অফিসিয়াল করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
অফিসিয়াল ফোন কি
যে সকল ফোনের উপর বাংলাদেশ সরকারকে ভ্যাট/ট্যাক্স/কর দেওয়া হয়েছে।অর্থাৎ আপনি একটি ফোন কিনেছেন, উক্ত ফোনের উপর যদি সরকারকে কোনো ট্যাক্স দেয়া থাকে তাহলে উক্ত ফোনটি অফিসিয়াল বা বৈধ।
আনঅফিসিয়াল ফোন কি
যে সকল ফোনের উপর সরকারকে কোনো প্রকার ভ্যাট বা ট্যাক্স দেওয়া হয়নি।অর্থাৎ আপনি একটি ফোন কিনেছেন এখন যদি উক্ত ফোনের উপর কোনো ভ্যাট বা ট্যাক্স দেয়া না থাকে ফোনটি আনঅফিসিয়াল বা অবৈধ।
আনঅফিসিয়াল ফোন চেনার উপায়
যেসব ফোন বিদেশ থেকে আমদানী করে সরকারকে ট্যাক্স না দিয়েই দেশের বাজারে বিক্রি করা হয় সেগুলো সরকারি তথ্যভাণ্ডারে নিবন্ধিত থাকেনা। অনেকের পরিচিত ব্যক্তিগণ বাইরের দেশে থাকেন সেখান থেকে উপহার হিসেবে ফোন পাঠিয়েছে কিংবা অনেকেই নিজেরাই বাইরের দেশ থেকে ফোন ক্রয় করে নিয়ে এসেছেন। এনইআইআর (NEIR) বা ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার ডাটাবেজে যেসব ফোন নিবন্ধিত নেই সেগুলোকে আনঅফিসিয়াল ফোন বা অবৈধ ফোন বলা হয়।
অফিসিয়াল ফোন চেনার উপায়
অফিসিয়াল মোবাইল ফোন হচ্ছে সেসব ফোন যেগুলো বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারী ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত আছে। অফিসিয়াল ফোন চেনার জন্য আপনার মোবাইলের ১৫ ডিজটের IMEI নম্বরটি কালেক্ট করুন।
অথবা আপনার মোবাইলের ডায়াল অপশন থেকে *#০৬# ডায়াল করুন। তাহলেই আপনার মোবাইলের IMEI নাম্বারটি দেখাবে। আপনার ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন KYD<স্পেস>আইএমইআই নম্বরটি সেন্ড করুন 16002 এর নম্বরে। আপনার ফোনে একটি এসএমএস পাঠাবে যেটাতে দেওয়া থাকবে আপনার মোবাইলটি বৈধ কি না।
আরো পড়ুনঃ ঢাকা শহরের বিভিন্ন কলেজে ভর্তি মার্কস ও আসন সংখ্যা ২০২৪-২০২৫
অফিসিয়াল আর আনঅফিসিয়াল ফোনের পার্থক্য
- অফিসিয়াল ফোন গুলোর দাম আনঅফিসিয়াল ফোন গুলোর তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।
- অফিশিয়াল ফোন ক্রয় করলে আপনি লিখিত মালিকানা পাবেন কিন্তু আন অফিসিয়াল ফোন ক্রয় করলে লিখতে হবে ফোনের কোন ধরনের মালিকানা পাবেন না।
- অফিসিয়াল ফোন আপনি পুরোপুরি ইনটেক এবং অরিজিনাল পাবেন। আনঅফিসিয়াল ফোন অরিজিনাল পাওয়া মুশকিল।
- অফিসিয়াল ফোন ফোন ক্রয় করার পর আপনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফোনে অফিশিয়াল ওয়ারেন্টি এবং সার্ভিস পেয়ে যাবেন কিন্তু আনঅফিসিয়াল ফোনের ক্ষেত্রে কোন ধরনের অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি বা সার্ভিস পাবেন না।
- অফিসিয়াল ফোন যদি হারিয়ে বা চুরি হয়ে যায় সেক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে খুব সহজে আপনি ফোনটিকে ট্র্যাক করে ফিরে পেতে পারেন। আর অফিসিয়াল ফোন হারিয়ে গেলে সহজে খুজে পাবেন না এছাড়াও আন অফিসিয়াল ফোন অবৈধ আইনি ব্যবস্থা নিতে গেলেও জটিলতায় পড়তে হবে।
- অফিসিয়াল ফোনগুলোতে সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার আপডেট এসে থাকে।আনোফিশিয়াল ফোনগুলোতে এমন কোন ধরনের সফটওয়্যার আপডেট পাবেন না।
আনঅফিসিয়াল ফোন বন্ধে ব্যবহারকারী কি কি বিড়ম্বনায় পড়বেন
অনিবন্ধিত বা আনঅফিসিয়াল ফোনগুলোকে নেটওয়ার্ক বহির্ভূত করা হলে ইতোমধ্যে সেই ফোন ব্যবহারকারীদের বেশ কিছু বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হবে তা নিম্নে দেয়া হলো
- আপনি আপনার ফোনের কোন ধরনের লিখিত মালিকানা পাবেন না।
- অপারেটর থেকে কল গ্রহণ বা কল প্রদান করা যাবে না।
- আনঅফিসিয়াল ফোনগুলোতে কোন ধরনের অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি পাবেন না।
- কোনো ধরনের ম্যাসেজ লেনদেন করা যাবে না।
- আনঅফিসিয়াল ফোন চুরি হয়ে গেলে আপনি ফোনটি ট্র্যাক করার ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। কারণ এটি অবৈধ ফোন।
- আপনি যদি আনঅফিসিয়াল চাইনিজ ভার্সন এর ফোন চিনে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার ফোনে গুগলের কোন ধরনের সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন না।
- অফিসিয়াল ফোনগুলোতে যেমন নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট আসে আনঅফিসিয়াল ফোনে আপনি কোন ধরনের আপডেট ব্যবহার করতে পারবেন না।
- আনঅফিসিয়াল ফোনটি যদি দেশের বাইরের হয় সেক্ষেত্রে আপনার কান্ট্রি সাপোর্ট নাও নিতে পারে।
- সরকারি বা সরকার অনুমোদিত বেসরকারি কোনো ডিজিটাল সেবা পাওয়া যাবে না।
- ডাটা ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে না
আনঅফিসিয়াল ফোন অফিসিয়াল করার উপায়
বিআরটিসি’র এই উদ্যোগটি বেশ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। এই উদ্যোগ গ্রহণের ফলে দেশের ভিতরে অবৈধ ফোন ক্রয় বিক্রয় অবাধে বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে কিছুটা অপরাধ সংঘটিত হবে।আপনি বাইরের দেশে বেড়াতে গেলেন এবং ওইখান থেকে যদি আপনি ফোন কিনে নিয়ে আসতে চান এক্ষেত্রে দুইটি ফোন নিয়ে দেশে আসতে পারবেন এতে কোন ধরনের ট্যাক্স প্রদান করার প্রয়োজন হবে না।বাইরের দেশ থেকে কেউ ফোন গিফট করলো। যে সকল ফোনগুলো আপনি আনঅফিসিয়াল থেকে অফিসিয়াল করতে পারবেন। চলুন তাহলে আনঅফিসিয়াল ফোন অফিশিয়াল করার উপায় সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেই-
- বিদেশ থেকে আনা কিংবা উপহার পাওয়া আনঅফিসিয়াল মোবাইল ফোন বিটিআরসি প্রদত্ত ওয়েবসাইট ব্যবহার করে রেজিস্টার বা নিবন্ধনের জন্য বিশেষ আবেদন করা যাবে।
- গ্রাহকরা তথ্য বা দলিল সহ অনলাইনে নিবন্ধকরণের জন্য দশ দিনের মধ্যে একটি SMS পাবেন।
- একবার দশ দিনের মধ্যে নিবন্ধিত হয়ে গেলে হ্যান্ডসেটটি "বৈধ" বিবেচনা করবে। অন্যথায় হ্যান্ডসেটটি অবৈধ বিবেচনা করবে এবং গ্রাহক এসএমএসের মাধ্যমে অবহিত করবেন।
- বিটিআরসি এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এর তথ্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। সেই একাউন্টে আপনার যাবতীয় তথ্য পূরণ সাপেক্ষে হ্যান্ডসেটটি বৈধ করতে হবে।
- neir.btrc.gov.bd এ প্রবেশ করুন এরপর ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার এর ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলতে Register নিবন্ধন করুন বাটনে ক্লিক করুন।
- এরপর সঠিকভাবে আপনার নাম, মোবাইল নাম্বার প্রদর্শিত বক্সে লিখুন একাউন্টের জন্য একটি পাসওয়ার্ড প্রদান করুন ক্যাপচা পূরণ করুন এরপর আপনার প্রদত্ত নাম্বারে একটি ওটিপি আসবে, সেটি প্রদান করুন ক্যাপচা প্রদান করে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন প্রসেস সম্পন্ন করুন।
- এভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করলে আপনার অবৈধ হ্যান্ডসেটটি বৈধ পরিণত হবে।
পাঠকের শেষ কথা
পরিশেষে এটাই বলব যে যদি ফোন কিনতে হয় সে ক্ষেত্রে আন অফিসিয়াল ফোন না কিনে অফিসিয়াল ফোন ক্রয় করুন। কেননা আপনি যদি দেশের ভেতরে আনঅফিসিয়াল ফোন ক্রয় করেন সে ক্ষেত্রে এ ফোনের পরবর্তীতে রেজিস্ট্রেশন করার কোন সুযোগ নেই।তবে আপনি যদি বিদেশ থেকে ফোন নিয়ে আসে অথবা কেউ পাঠায় তাহলে এটি রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ রয়েছে, আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। আপনার মতামত অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url